Followers

Thursday, November 24, 2011

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার : গণজাগরণই হবে নিয়ামক শক্তি


যুদ্ধাপরাধীদের বিচার : গণজাগরণই হবে নিয়ামক শক্তি

মোনায়েম সরকার

মোনায়েম সরকার

 

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা পাকিস্তানি ঘাতক বাহিনীর সহযোগী হয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনে নেতৃত্ব দিয়েছিল, যাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজসহ নানা ধরনের অপরাধে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে, তাদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছেকয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছেতবে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ যার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি, যাকে পালের গোদা বলে মনে করা হয় সেই জামায়াত নেতা গোলাম আযমকে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার না করায় অনেকের মধ্যেই কিছু প্রশ্ন ও হতাশা আছেগোলাম আযমের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহের কাজ প্রায় শেষ, তাকে খুব শীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে বলে তদন্ত কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা যায়সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেও এ ব্যাপারে সম্মতি আছে বলেও জানা যায়গোলাম আযমকে গ্রেফতার করা হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে যাদের মনে সন্দেহ-সংশয় রয়েছে, তারাও কিছুটা নিঃসংশয় হতে পারবেন

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট যে গত নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে, সেটা একদিকে যেমন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের চরম দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ, অন্যদিকে আর একটি বড় কারণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ ত্বরান্বিত ও সম্পন্ন করার জন্য তরুণ প্রজন্মের আওয়ামী লীগের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থনআওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না গেলে যে এই বিচার সম্পন্ন করা সম্ভব নয় এবং এই অশুভ শক্তি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলে দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাও নিষ্কন্টক হবে নাএই দুই উপলব্ধি থেকেই তরুণ সমাজসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার জন্য ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছেমহাজোট ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষের আকাঙ্খার প্রতি সম্মান জানিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছেতবে বিষয়টি নিয়ে সরকারের আন্তরিকতার অভাব না থাকলেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও সমন্বয়ের ক্ষেত্রে ঘাটতি আছে বলে অনেকে মনে করেন
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করাটা নিশ্চয়ই সহজ ব্যাপার নয়এটা একটি জটিল প্রক্রিয়াএর রয়েছে জাতীয়-আন্তর্জাতিক এবং সামাজিক-রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া সবদিক সামলে নিয়েই সরকারকে অগ্রসর হতে হবেমুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ও তার দেশীয় সহচরদের, যেমন বিদেশী সমর্থক আমেরিকা ও চীনের মতো শক্তিশালী দেশ ও সরকার ছিল, এখনও তেমনি ঘাতক-দালালদের রক্ষা করার মতো আন্তর্জাতিক শক্তি রয়েছেযুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে মধ্যপ্রাচ্যের মনোভাব কী সেটা না জেনে-বুঝে সরকার হুট করে কিছু করতে পারবে না, তবে সরকার যদি দক্ষতার সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে পারে, তাহলে একাত্তরে যেমন কারো বিরোধিতা আমাদের বিজয় ঠেকাতে পারেনি, তেমনি এখনও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজও আটকাতে পারবে না
চল্লিশ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছেমুক্তিযুদ্ধে আমরা যাদের পরাজিত করেছি, তারা অনুকূল রাজনৈতিক পরিবেশ পেয়ে এই চল্লিশ বছরে শক্তি সঞ্চয় করেছেবিশেষ করে পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়কালে সামরিক শাসক এবং তাদের তৈরি রাজনৈতিক দলের সাহায্য-সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেযুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা মন্ত্রী, এম.পি হয়েছে, এমনকি রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হয়েছেতারা বিচ্ছিন্ন হয়নি, বরং প্রতিষ্ঠিত হয়েছেনিজেদের অবস্থান সংহত করার জন্য তারা সুদূরপ্রসারী ও সুচতুর পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হয়েছেঅর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসন ইত্যাদি ক্ষেত্রে তারা মারাত্মক শক্তি বৃদ্ধি ঘটিয়েছেভোটের রাজনীতিতেও তারা নিজেদের ফ্যাক্টরহিসেবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে সাধারণ মানুষের সমর্থন তাদের প্রতি তেমন জোরালো না হলেও এক ধাক্কায় উপড়ে ফেলার অবস্থায় এখন তারা নেইদেশের মধ্যে যেমন, তেমনি দেশের বাইরেও তাদের মিত্র ও মুরুব্বি আছেএটা যেমন এক বাস্তবতা, তেমনি এটাও বাস্তব যে, দেশের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনে এদের বিরুদ্ধে প্রবল ঘৃণা রয়েছেঅনেকেই চায় না এরা রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বিরাজ করুক
শত্রুর শক্তিকে কখনোই দুর্বল ভাবতে নেইকিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজে হাত দেয়ার আগে সরকার সবদিক ভেবেচিন্তে দেখেছে কি-না সে প্রশ্ন কারো কারো মনে আছেতাদের শক্তির উৎসমুখগুলো বন্ধ করার দিকে নজর না দিয়ে তাদের দুর্বল করা সহজ হবে নাকেউ কেউ মনে করছেন, সরকার হয়তো ভেবেছে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে যেহেতু তারা ক্ষমতায় এসেছে, তাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা তাদের জন্য কোনো বড় সমস্যা হবে নাসরকারের এই ধরনের সরল ভাবনায় গলদ আছে
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি সম্পূর্ণই আইনি প্রক্রিয়া, যদিও এর সঙ্গে বাঙালির গভীর আবেগ জড়িতকিন্তু আইনের বাইরে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে বিচার কাজ করা যাবে নাআবার চূড়ান্ত বিবেচনায় এটা একটি বড় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেরও বিষয়অর্থাৎ আবেগ, রাজনীতি, আইনতিনটির যথাযথ সমন্বয় ছাড়া এই বিচার কাজ শেষ করা যাবে নাএখন সবার সামনে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার কী যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শেষ করার লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছে, নাকি এটাকেও সরকার রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছে?
এ নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই যে, দেশের মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে প্রায় তিন বছর হতে চললোআর মাত্র বছর দুয়েক পর সরকারকে নির্বাচনের মুখোমুখি হতে হবেগত নির্বাচনের আগে সরকার দেশের মানুষের সামনে যে সব অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেগুলোর বেশির ভাগই যদি পূরণ করতে না পারে তাহলে আগামী নির্বাচনে মানুষ কি আওয়ামী লীগ বা মহাজোটের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করবে? যদি তা না করে তাহলে কী হবে? সরকার কি এই মেয়াদকালের মধ্যেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শেষ করতে পারবে, নাকি এটা কিছুদূর এগিয়ে নিয়ে তারপর নির্বাচনের আগে দেশের মানুষের কাছে বলা হবে যে, আমরা বিচার কাজ ঠিকই শুরু করেছি কিন্তু এটা শেষ করার জন্য আমাদের আরো সময় এবং সুযোগ প্রয়োজনকাজেই আমাদের আরেকবার নির্বাচিত করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শেষ করার সুযোগ দিন
এ ধরনের অবস্থা যদি সত্যি তৈরি হয়, তাহলে দেশের মানুষের প্রতিক্রিয়া কী হবে সেটা এখনই অনুমান করা কঠিনসেটা নিয়ে আমরাও বেশি জল্পনাকল্পনা করতে চাই নাআমরা বরং চাই, সরকারের হাতে এখনও যে দুই বছর সময় আছে এই সময়টাকে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানো হোকসরকারি পদক্ষেপে যেসব ত্রুটি-দুর্বলতা আছে সেগুলো দূর করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হোকমানুষকে এবার কোনোভাবেই হতাশ করা চলবে নাহতাশ মানুষ সহজেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়েকাজেই সরকারকে সতর্কতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গেই অগ্রসর হতে হবে যাতে মানুষ হতাশ ও বিভ্রান্ত না হয়
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে বিএনপি শুরুর দিকে কিছুটা কৌশলের আশ্রয় নিলেও সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রকাশ্যেই নিজামী-মুজাহিদদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং কার্যত তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারেরও বিরোধিতা করেছেনসরকার ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এটা বলা হয়ে থাকে যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ বানচাল করাই বিএনপি তথা খালেদা জিয়ার আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যপ্রথমে মানুষ এটা সেভাবে বিশ্বাস না করলেও এখন বিভিন্ন সমাবেশে বেগম জিয়ার প্রকাশ্য বক্তব্যের পর মানুষের কাছে তার অবস্থান ও মনোভাব স্পষ্ট হয়েছেবিএনপি এবং জামায়াত কেউ কাউকে ছেড়ে যাবে না এবং বিএনপি এখন মূলত জামায়াতনির্ভর একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত হচ্ছেসিলেট, বগুড়া ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সমাবেশে জামায়াতের শক্তি প্রদর্শন এটাই প্রমাণ করেবিএনপিতে যারা নিজেদের মুক্তিযোদ্ধাবা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বলে দাবি করেন তারা কি বেগম জিয়ার এই দাবির সঙ্গে একমত যে নিজামী-মুজাহিদরা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী নয়? গোলাম আযম-নিজামী-মুজাহিদরা একাত্তরে কোন্ পক্ষ অবলম্বন করে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনী গঠন করে কাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল? সেটা বেগম জিয়া ভুলে যেতে পারেন, কিন্তু স্বজন হারানো কোটি কোটি বাঙালির পক্ষে কি তা ভুলে যাওয়া বা ভুলে থাকা সম্ভব? একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় প্রবলভাবে সোচ্চার হওয়ার পেছনে খালেদা জিয়ার একটি একান্ত ব্যক্তিগত কারণও কাজ করে থাকতে পারেমুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মেজর জিয়া তাকে পাকিস্তানের আশ্রয় ছেড়ে জিয়ার কাছে চলে আসতে একাধিকবার লোক পাঠিয়েছিলেনসর্বশেষ খালেদা জিয়াকে নিরাপদে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে নিয়ে আসার জন্য তিনি ৬ জন তরুণ প্রশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধাকেও তার কাছে পাঠিয়েছিলেনখালেদা জিয়া মেজর জিয়ার কাছে যেতে রাজী হননি
যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়ে বিএনপি কেবল সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে বলে মনে করলে ভুল করা হবেবেগম জিয়া এবং তার দল বিএনপি বস্তুত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকেই চ্যালেঞ্জ করেছেএটাই তাদের রাজনীতিএই রাজনীতি নিয়েই তারা এগিয়ে যেতে চায়তারা বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায়কারণ, তাহলে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদেরও বাঁচানো সম্ভব হবেমুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এবং সরকার কি বিএনপির এই চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করবে নাকি এটাকে মামুলি বিষয় বলে উপেক্ষা করবে? আমাদের মনে হয়, বিএনপির এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ না করার কোনো বিকল্প বর্তমান সরকার এবং মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তির মধ্যে নেইসরকারের মধ্যে যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে কোনো দ্বিধা বা দোদুল্যমানতা থাকে, তাহলে তা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে হবে এবং একই সঙ্গে সরকার যে দ্বিধা ও দোদুল্যমানতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে সেটা দেশের মানুষের সামনে স্পষ্ট করে তুলতে হবে
সরকারকে কালবিলম্ব না করে কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবেপদক্ষেপগুলো হলো : (ক) যুদ্ধাপরাধীদের পালের গোদা গোলাম আযমকে দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে; (খ) যাদের ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের বিচার কাজ দ্রুত শুরু করতে হবেঅভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীরা কৌশলে কালক্ষেপণ করতে চাইবেন, রাষ্ট্রপক্ষের উচিত হবে না তাদের ফাঁদে পা দেয়া; (গ) বিচার সংক্রান্ত যে কোনো দুর্বলতা দ্রুত দূর করতে হবেপ্রসিকিউশনের দায়িত্ব যাদের দেওয়া হয়েছে তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন আছেখোঁড়া ঘোড়া দিয়ে রেসে জেতা যায় নাএটা মনে রাখতে হবেতাই আইনি লড়াইয়ে যাদের ওপর নির্ভর করা যায়, সে রকম অভিজ্ঞ আইনজীবীদের এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করতে হবেএক্ষেত্রে কারো ব্যক্তিগত রাগ-অনুরাগের বিষয় যেন কোনোভাবেই বৃহত্তর স্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান না পায়; (ঘ) আইনি লড়াই পরিচালনার জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেয়ার পাশাপাশি বিচারের পক্ষে রাজনৈতিক উদ্যোগটাও দৃশ্যমান করে তুলতে হবে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ভূমিকা মানুষের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না আওয়ামী লীগকে দেশব্যাপী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে যেমন দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাবেশ ঘটাতে হবে, তেমনি মহাজোটের শরিক রাজনৈতিক দলগুলোকেও এ বিষয়ে সক্রিয় হতে হবে; (ঙ) খালেদা জিয়া যখন ঘাতক-দালালদের পক্ষে কথা বলছেন তখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি নীরবতা পালন করছে কেন? ঘাতক-দালাল এবং তাদের রক্ষাকারীদের বিরুদ্ধে কেন দেশবাসী প্রবল গণরোষ সৃষ্টি হচ্ছে না? মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কী ভূমিকা পালন করছে?
সব রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তি ঐক্যবদ্ধভাবে সক্রিয় হলে গণবিরোধী অপশক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারবে নাএকাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের কালপর্বে দেশের মানুষের মধ্যে যে অভূতপূর্ব ঐক্য ও জাগরণ তৈরি হয়েছিল, ছাত্র-শিক্ষক-কৃষক-শ্রমিক-নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের দুর্জয় ঐক্যের সামনে দেশি-বিদেশী কোনো ষড়যন্ত্রই মাথা তুলতে পারেনিসম্মিলিত গণশক্তির উত্থান যে কোনো চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করার মোক্ষম অস্ত্রআমরা চল্লিশ বছর যাবত প্রতি বছর ২৬ মার্চ, ১৫ আগস্ট, নভেম্বর, ১৪ ডিসেম্বর ও ১৬ ডিসেম্বর মহরমের মতো শোকের মাতম করছিআজ শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে ঘাতকদের আঘাত করার সময় এসেছেজনতার শক্তির কাছে অন্য সব কিছু পরাভব মানেযুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নেও আজ কেবল সরকারের দিকে চেয়ে না থেকে আমরা সবাই যদি নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সোচ্চার হয়ে উঠি, তাহলে সরকারও দ্বিধা কাটিয়ে উঠতে পারবে সহজেইবিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন যেমন সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, প্রজন্ম একাত্তরসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও গোলাম আযমের গ্রেফতারের দাবিতে রাজধানীসহ সারাদেশে যদি লাখ লাখ মানুষ রাজপথে নেমে আসে, তাহলে সেই প্রবল জনস্রোত রোখার ক্ষমতা কারো থাকবে নাজয় বাংলা বলে একাত্তরের সেই জাগরণ তৈরির ক্ষমতা আমাদের আছে কি-না সেটাই হলো বড় প্রশ্ন
মোনায়েম সরকার : প্রাবন্ধিক, গবেষক ও রাজনৈতিক কর্মী