Followers

Thursday, July 26, 2012

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত জীবনের অসমাপ্ত আত্মজীবনী - মোনায়েম সরকার

বাংলায় আমরা যাকে বলি আত্মজীবনী তার ইংরেজি প্রতিশব্দ অঁঃড়নরড়মৎধঢ়যু শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন ডরষষরধস ঞধুষড়ৎ· ইংরেজি সাময়িকী গড়হঃযষু জবারব-িতে ১৭৯৭ সালে। তখন অনেকেই এটি গবসড়রৎং-এর মতই শব্দ বাগাড়ম্বর বলে উপহাস করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে এই অঁঃড়নরড়মৎধঢ়যু - তা সমাপ্ত বা অসমাপ্ত যাইহোক না কেন, সমকালীন জীবন ও সমাজের ইতিহাস বিনির্মাণে যে এক অপরিহার্য উপাদান বলে স্বীকৃতি লাভ করেছে, তা বলাই বাহুল্য।
আত্মজীবনীর গুরুত্বের প্রমাণঃ ১১ শতকের শেষ মুসলমান সম্রাট আব্দুল্লাহ ইবনে বুলগ্‌গিনের আত্মজীবনী, প্রথম মুঘল সম্রাট জহিরউদ্দীন মুহাম্মদ বাবরের ‘বাবুর নামা’ (১৪৯৩-১৫২৯) থেকে শুরু করে খবড় ঞড়ষংঃড়ু-এর ঈযরষফযড়ড়ফ, ইড়ুযড়ড়ফ, ধহফ ণড়ঁঃয (১৮৫৬), ইবহলধসরহ ঋৎধহশষরহ আত্মচরিত (১৮৬৯), ঈযধৎফবং উধৎরিহ-এর আত্মজীবনী (১৮৮৭), ঐবষবহ কবষষবৎ-এর ঞযব ঝঃড়ৎু ড়ভ সু ষরভব (১৯০৩) গধৎশ ঞরিহ-এর আত্মজীবনী (১৯০৭) অফড়ষভ ঐরঃষবৎ-এর গবরহ কধসঢ়ভ (১৯২৫) গধযধঃসধ এধহফযর্থ-এর ঞযব ঝঃড়ৎু ড়ভ সু ঊীঢ়বৎরসবহঃ রিঃয ঞৎঁঃয (১৯২৯), ঔধধিযধৎষধষ ঘবযৎঁ-এর আত্মজীবনী (১৯৩৬), ঘরৎড়ফ ঈ· ঈযড়ফিযঁৎু-এর ‘এক অজ্ঞাতনামা ভারতীয়র আত্মজীবনী(১৯৫১), ঘবষংড়হ গধহফবষধ-এর আত্মজীবনী (১৯৯৫)।
কারাগারে বসে লেখা বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী অসমাপ্ত হলেও আত্মজীবনী রচনার ক্ষেত্রে একটি উজ্জ্বল মাইলফলক। তার আত্মজীবনী শুধু এক রাজনীতিকের স্মৃতিকথা নয়, উপমহাদেশের রাজনীতির ইতিহাসের এক অনন্য স্মৃতিভাণ্ডার। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে শত শত বই বের হয়েছে, কিন্তু অসমাপ্ত আত্মজীবনীর সঙ্গে অন্য কোনো বইয়ের তুলনা হয় না। বস্তুত একটি জাতির জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত আসে যা ভিত্তি রচনা করে তার যথার্থ আত্মপরিচয়, এমন কিছু মানুষের অভুদ্যয় হয়, যাঁরা হন সেই জাতির নবজন্মের দিশারী। এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ফরিদপুরের দক্ষিণতম প্রান্তিক এক জনপদে ক্রমান্বয়ে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম (১৯২০,১৭ মার্চ) বিধাতার এমনই এক দাক্ষিণ্য- যিনি নিজস্ব যোগ্যতায় সমকালীন আরো অনেক প্রথিতযশা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে প্রথিতদশায় ফেলে রেখে এগিয়ে এসেছিলেন ভাবী বাংলাদেশের জনক হিসেবে। তারই সুযোগ্য আত্মজা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উৎসাহে সম্প্রতি প্রকাশিত (২০১২) ৩২৯ পৃষ্ঠার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ শেখ মুজিবুর রহমান ও তার ৩২৩ পৃষ্ঠার ইংরেজি অনুবাদটি (ঞযব টহভরহরংযবফ গবসড়রৎং) প্রকাশ আমাদের জন্য একটি বড় অনুপ্রেরণার বিষয়।
ইংরেজ কবি ড·ঐ অঁফবহ একদা বলেছিলেনঃ ‘ঊাবৎু অঁঃড়নরড়মৎধঢ়যু রং পড়হপবৎহবফ রিঃযঃড়ি পযধৎধপঃবৎংঃ অ উড়হ ছঁরীড়ঃব,ঃযব বমড় ধহফ ধ ঝধহপযড় চধহুধ,ঃযব ংবষভ’ প্রতিটি আত্মজীবনী লেখক স্প্যানিস সাহিত্যিক মিগুয়েল দ্য সার্ভেস্টিস সাভেদ্রা (১৫৪৭-১৬১৬)-এর উপন্যাসের নায়ক ডন কিহতোর চরিত্রের মতো লেখক ইগো বা অহংবোধই প্রধান আর তাঁর বিশ্বস্ত অনুগামী সাঙ্কোপাঞ্জার মতো সত্যিকার চরিত্রটি। এই দিক দিয়ে বঙ্গবন্ধুর এই আত্মজীবনীটি একটি ব্যতিক্রমঃ অকপট সরলতার সততা ও নিরাভরণ সত্য কথনের এক দুর্লভ দৃষ্টান্ত হিসেবে।
টুঙ্গিপাড়ার কয়েক শতাব্দির প্রাচীন এক প্রবল প্রভাবশালী বংশের উত্তরসূরী তিনি। একদা বাড়ির চার ভিটায় মুঘল আমলের সরু ইটের চারটা দালান। সময়ের সাথে তা এখন ভগ্নপ্রায় তাই সেই প্রাসাদের পরিবর্তে পাশেই তৈরি টিনের ঘরে বসবাস। বঙ্গবন্ধুর নিজের বয়ানঃ ‘আমি এই টিনের ঘরের এক ঘরেই জন্মগ্রহণ করি’।
একদা তাঁর পূর্বসূরী শেখ কুদরতউল্লাহ প্রতিপক্ষ নীলকর সাহেবের সাথে মামলায় জিতে আধা পয়সা জরিমানা করে বলেছিলেন ‘টাকা আমি গুণি না, মেপে রাখি। টাকার আমার দরকার নাই। তুমি আমার লোকের উপর অত্যাচার করেছো; আমি প্রতিশোধ নিলাম’। ইংরেজ সাহেবকে শেখ কুদরতউল্লাহ এই ‘আধা-পয়সা জরিমানার’ কাহিনী গান হিসেবে টুঙ্গিপাড়ার পাশ দিয়ে প্রবাহিত মধুমতি নদীর ওপারের খুলনা জেলায় এখনও শোনা যায়। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে আরও দেখিঃ
‘একটা ঘটনা লেখা দরকার, নিশ্চয়ই অনেকে আশ্চর্য হবেন। আমার যখন বিবাহ হয় তখন আমার বয়স বার-তের বছর হতে পারে। রেণুর (বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব) বাবা মারা যাওয়ার পরে ওর দাদা আমার আব্বাকে ডেকে বললেন, ‘তোমার বড় ছেলের সাথে আমার এক নাতনীর বিবাহ দিতে হবে। কারণ, আমি সমস্ত সম্পত্তি ওদের দুই বোনকে লিখে দিয়ে যাব।’ রেণুর দাদা আমার আব্বার চাচা। মুরব্বির হুকুম মানার জন্যই রেণুর সাথে আমার বিবাহ রেজিস্ট্রি করে ফেলা হল। আমি শুনলাম আমার বিবাহ হয়েছে। তখন কিছুই বুঝতাম না, রেণুর বয়স তখন বোধহয় তিন বছর হবে। রেণুর যখন পাঁচ বছর বয়স তখন তার মা মারা যান। এক মাত্র রইল তার দাদা। দাদাও রেণুর সাত বছর বয়সে মারা যান’।
শেখ মুজিব রাজনীতিতে এত ব্যাপক জনসম্পৃক্ত ও জনপ্রিয় হয়েছিলেন যে এলাকার বালক-বৃদ্ধ, পিতা-পুত্র, মা-কন্যা সবার কাছে তিনি ছিলেন মুজিব ভাই। সারাদেশের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কাছেও তিনি হয়ে উঠেন ভরসার স্থল ও তাদের সুখ দুঃখের চির সাথী মুজিব ভাই। অসমাপ্ত আত্মজীবনী যারা পড়বেন তারা সহজেই বুঝতে পারবেন আমাদের পরিচিত শেখ মুজিবুর রহমান মুজিব ভাই থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে কীভাবে স্বাধীনতার ডাক দিলেন সেই কালজয়ী বিশ্ববিখ্যাত ৭ মার্চের ভাষণে।
অসমাপ্ত আত্মজীবনীর পরিমার্জনের কাজ যারা করেছে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে সাল-তারিখ উল্লেখ করলে পাঠকদের সুবিধা হতো- যেমন দিল্লির কনভেনশন ১৯৪৬ সাল উল্লেখ নেই।
‘হঠাৎ খবর আসল, জিন্নাহ সাহেব ৭, ৮, ৯ এপ্রিল দিল্লিতে সমস্ত ভারতবর্ষের মুসলিম লীগপন্থী কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের কনভেনশন ডেকেছেন। বিগত নির্বাচনে বাংলাদেশ ও মুসলিম সংখ্যালঘু প্রদেশগুলিতে মুসলিম লীগ একচেটিয়াভাবে জয়লাভ করেছে। তবে অধিকাংশ মুসলিম জনসংখ্যা অধুøষিত পাঞ্জাব, সিন্ধু ও সীমান্ত প্রদেশে মুসলিম লীগ এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ হতে পারে নাই। তাই শুধুমাত্র বাংলাদেশে জনাব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে মুসলিম লীগ সরকার গঠন হয়েছে।’
··· শহীদ সাহেব স্পেশাল ট্রেনের বন্দোবস্ত করতে হুকুমি দিলেন। বাংলা ও আসামের মুসলিম লীগ এমএলএ ও কর্মীরা এই ট্রেনে দিল্লি যাবেন। ট্রেনের নাম দেওয়া হলো ‘পূর্ব পাকিস্তান স্পেশাল’। হাওড়া থেকে ছাড়বে। আমরাও বাংলাদেশ থেকে দশ-পনেরজন ছাত্রকর্মী কনভেনশনে যোগদান করব। এ ব্যাপারে শহীদ সাহেবের অনুমতি পেলাম। সমস্ত ট্রেনটাকে সাজিয়ে ফেলা হল মুসলিম লীগ পতাকা ও ফুল দিয়ে। দুইটা ইন্টারক্লাস বগি আমাদের জন্য ঠিক করে ফেললাম। ছাত্ররা দুষ্টামি করে বগির সামনে লিখে দিল, ‘শেখ মুজিবর ও পার্টির জন্য রিজার্ভড’; এ লেখার উদ্দেশ্য হল, আর কেউ এই ট্রেনে যেন না ওঠে। আর আমার কথা শুনলে শহীদ সাহেব কিছুই বলবেন না, এই ছিল ছাত্রদের ধারণা। যদিও ছাত্রদের নেতা ছিল নূরুদ্দিন। তাকেই আমরা মানতাম।
···শহীদ সাহেব ও হাশিম সাহেবের কামরায় দুইটা মাইক্রোফোন লাগিয়ে দেওয়া হল। হাওড়া থেকে দিল্লি পর্যন্ত প্রায় সমস্ত স্টেশনেই শহীদ সাহেব ও তাঁর দলবলকে সম্বর্ধনা জানাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশে মুসলিম লীগের জয়ে সমস্ত ভারতবর্ষের মুসলমানদের মধ্যে একটা বিরাট আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছে। জহিরুদ্দিনকে হাশিম সাহেবের কামরার কাছেই থাকার বন্দোবস্ত হয়েছিল। কারণ, তাকে সমস্ত পথে উর্দুতে বক্তৃতা করতে হবে।
অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বহু ঘটনার বর্ণনা এমনভাবে দেওয়া হয়েছে যা অনেক প্রখ্যাত লেখকের পক্ষেও সম্্‌ভব নয়। যেমন আজমীর শরীফে খাজাবাবার দরগা জিয়ারত, লালকেল্লা, কুতুব মিনার, জামে মসজিদ ইত্যাদি দেখার প্রসঙ্গ। তাজমহল দেখার স্মৃতি বর্ণনা অসাধারণ ও নিম্নরূপঃ
‘সূর্য অস্তাচলগামী, আমরাও তাজমহলের দরজায় হাজির। ··· সূর্য যখন অস্ত গেল, সোনালী রঙ আকাশ থেকে ছুটে আসছে। মনে হলো, তাজের যেন আর একটা নতুন রূপ। সন্ধ্যার একটু পরেই চাঁদ দেখা দিল। চাঁদ অন্ধকার ভেদ করে এগিয়ে আসছে আর সাথে সাথে তাজ যেন ঘোমটা খোলে দিয়ে নতুন রূপ ধারণ করছে। কি অপূর্ব দেখতে! আজও একুশ বছর পর লিখতে বসে তাজের রূপকে আমি ভুলি নাই। আর ভুলতে পারব না। দারোয়ান দরোজা বন্ধ করার পূর্ব পর্যন্ত আমরা তাজমহলেই ছিলাম। পরেরদিন সকালবেলা আমাদের যেতে হবে ফতেপুর সিক্রিতে।’
এমন সহজ সরল ব্যক্তিগত জীবনের বর্ণনার পাশাপাশি বৃহত্তর পরিসরের বর্ণনায় যে অর্ন্তদৃষ্টি তাও লক্ষণীয়। পাকিস্তানের রাজনীতিতে প্রথম থেকেই আমলাতন্ত্রের যে প্রবল প্রতাপ তার উত্তাপ বোঝা যায় অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ১৯৫ পৃষ্ঠার বর্ণনা থেকেঃ
‘১৯৫১ সালের অক্টোবর মাসে মওলানা ভাসানী ও আমি যখন জেলে, সেই সময় জনাব লিয়াকত আলী খানকে রাওয়ালপিন্ডিতে এক জনসভায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। ···যদিও তাঁরই হুকুমে এবং নূরুল আমিন সাহেবের মেহেরবাণিতে আমরা জেলে আছি, তবুও তাঁর মৃতুøতে দুঃখ পেয়েছিলাম। কারণ ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি না। ··· রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে গুলি করে হত্যা করা যে কত বড় জঘন্য কাজ তা ভাষায় প্রকাশ করা কষ্টকর। আমরা যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, তারা এই সমস্ত জঘন্য কাজকে ঘৃণা করি। খাজা নাজিমুদ্দীন সাহেব তাঁর মন্ত্রিত্বে একজন সরকারি আমলাকে গ্রহণ করলেন, এরপর আমলাতন্ত্রের প্রকাশ্য খেলা শুরু হল পাকিস্তানের রাজনীতিতে। একজন সরকারি কর্মচারী হলেন গভর্নর জেনারেল, আরেকজন হলেন অর্থমন্ত্রী। খাজা সাহেব ছিলেন দুর্বল প্রকৃতির লোক। তিনি অনেক গুণের অধিকারী ছিলেন, তবে কর্মক্ষমতা এবং উদ্যোগের অভাব ছিল। ফলে আমলাতন্ত্র মাথা তুলে দাঁড়াল। ··· আমলাতন্ত্রের জোটের কাছে রাজনীতিবিদরা পরাজিত হতে শুরু করল’। এমন দৃষ্টান্ত প্রচুর তুলে ধরা যায়।
আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধুর শিল্প, সাহিত্য, কবিতা, সৌন্দর্যবোধ ও সঙ্গীতের প্রতি গভীর অনুরাগের পরিচয় পাওয়া যায়। নজরুল, রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তির কথা ও আব্বাসউদ্‌দীনের গানে মুগ্ধ হওয়ার ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়।
বাংলা মূল বই ও তার ইংরেজি অনুবাদটি উল্লেখযোগ্য দু’টি কারণেঃ (১) এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছয় পৃষ্ঠার একটি ভূমিকায় সমৃদ্ধ এবং ভাষান্তরটি যথার্থই প্রশংসনীয়। এজন্য এর অনুবাদক অবশ্যই ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞার পাত্র। মূল বাংলা এবং তার ইংরেজি অনুবাদ দু’টিরই মুদ্রণ এবং প্রকাশনা সৌকার্য নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক মানের। তবে বলা বাহুল্য, প্রথম প্রকাশনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্কতা সত্ত্বেও কিছু মুদ্রণ প্রমাদ থেকে যাওয়া মোটেই অস্বাভাবিক নয়। বর্তমান ক্ষেত্রে সেই দৃষ্টিতে দেখতে গেলে এমন কিছু ঘটেনি তা বলা যাবে না।
নমুনা হিসেবে বলা যায়, মূল বইয়ের শুরুতে লেখা হয়েছে জেলখানায় বন্দিদশায় স্ত্রী যখন বঙ্গবন্ধুকে বলছেন ‘বসেই তো আছো, লেখো তোমার জীবনের কাহিনী’ তার উত্তরে তিনি বললেন লিখতে যে পারি না’। বাক্যটি ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছে ‘ঝরহপব ুড়ঁ ধৎব রফষব, ৎিরঃব ধনড়ঁঃ ুড়ঁৎং ষরভব হড়·ি ওঃড়ষফ যবৎ, ও পধহ্থঃ ৎিরঃব্থ· এটি আক্ষরিক অনুবাদ হিসেবে হয়তো বা ঠিক কিন্তু ওফষব যা সচারাচর আলস্যের প্রতীক, তার পরিবর্তে ‘যধারহম হড়ঃযরহমঃড় ফড় রহ ঢ়ধৎঃরপঁষধৎ্থ কী নিদেনপক্ষে ‘ওফষরহম’ শব্দ প্রয়োগ সম্্‌ভবত যথাযথ ছিল। আবার ‘ও পধহ্থঃ ৎিরঃব’ বাক্যে কতখানি লেখার অক্ষমতা আর কতখানি একজন যোগ্য লেখকের পক্ষেও জেলখানার পরিবেশ এবং প্রতিবেশে তাঁর লেখার ক্ষেত্রে কতখানিক সহায়ক, তাও বিবেচনার বিষয়। নিঃসন্দেহে এক্ষেত্রে লেখক তার প্রতিকূল পরিবেশের কথাই ইঙ্গিত করেছেন। তাই ‘ও পধহ্থঃ ৎিরঃব’-এর পরিবর্তে ইংরেজিতে ‘ও ধস ৎবধষষু হড়ঃ রহ ধ ংঃধঃব ড়ভ ৎিরঃরহম্থ এই ধরনের বাক্যই যথাযথ হতো।
ইংরেজি অনুবাদের তৃতীয় পৃষ্ঠায় নীলকর রাইন যে মাঝিদেরকে শুধু অন্যায়ভাবে আটক করে রাখতেন তা নয়, সেই সাথে তাদের দিয়ে নিজের কাজও করিয়ে নিতেন এই শেষ তথ্যটি বাদ পড়ে গেছে।
ইংরেজি অনুবাদক এ ছাড়াও মূল বইয়ের পরিচ্ছেদ বিভক্তি উপেক্ষা করে কিছু ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। যেমনঃ ১৩ পৃষ্ঠায় যেখানে মূল লেখক একটি নতুন অধ্যায় সূত্রপাত করেছেন। ১৯৩৯ এর ঘটনা দিয়ে, অনুবাদক সেটি রক্ষা করেননি। অপরদিকে, যেখানে এমন কোনো বিভাজন নাই সেখানে বিভাজন এনেছেন এই একই পাতায়। এ ধরনের ইচ্ছামাফিক বিভাজন করার উদাহরণ ছড়ানো সারা অনূদিত বইতেই।
আমরা জানি বঙ্গবন্ধু ম্যাট্রিকুলেশন (বর্তমানে এস·এস·সি) পাশ করেছিলেন ১৯৪২ সালে। এ তথ্য বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত একাধিক প্রামাণ্য গ্রন্থে উল্লেখিত। অথচ অনুবাদে সালটি উল্লেখ হয়েছে ১৯৪০ বলে। এটা একটি বড় ত্রুটি। অনুবাদের ২৯০ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে ‘জবহঁ ংবহঃ সব ধঃবষবমৎধসঃড় রহভড়ৎস সবঃযধঃ···’। অথচ মূলে বলা আছে ‘রেণু টেলিগ্রাম পেয়েছে’। এভাবে দেখতে গেলে ছোটখাটো অনেক অসমাঞ্জস্য চোখে পড়বে। এই ত্রুটি-বিচুøতিগুলো হয়তো বা তেমন মারাত্মক কিছু নয়। তবে আমাদের প্রত্যাশা পরবর্তী সংস্ড়্গরণে এ ধরনের ছোটখাটো ত্রুটি-বিচুøতি দূরীভূত হবে। অনুবাদক যথেষ্ট সাবলীল অনুবাদ শৈলীর প্রকাশের ক্ষমতা রাখেন বলেই আমাদের আশা মূল রচনার প্রতি তিনি আরো একটু বিশ্বস্ত থাকবেন।
বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখা এই অসাধারণ বইটি সময় উপযোগী এই কারণে যে, আজকের আওয়ামী লীগের যে দশা, তার থেকে যদি উত্থান পর্বের সূচনা করতে হয় তাহলে ’৭০-এর নির্বাচনের মতো আবার অন্য কারো নাম নয়, বঙ্গবন্ধুর নামেই আবেগ সৃষ্টি করে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলে অগ্রসর হতে হবে সকল প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে। বাংলাদেশের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর নামে এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি হয়েছে। গ্রন্থটিতে অনেক প্রাসঙ্গিক তথ্য সংযোজিত হয়ে এর গুরুত্ব বাড়িয়েছে। তবে এই সংযোজনের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আরো কিছু ভাষণ বিশেষ করে পাকিস্তান গণপরিষদে (১৯৫৫-৫৮) গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ এবং কিছু চিঠি যেমন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে লেখা বঙ্গবন্ধুর বাজেয়াপ্ত চিঠি উল্লেখ করা প্রত্যাশিত ছিল। কারণ ফরিদপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২১·১২·৫০ সালের এই চিঠিতে কারাবন্দি থেকেও সমকালীন রাজনীতি সম্পর্কে ঔৎসুক্য, মওলানা ভাসানীর মতো সহযোদ্ধাদের জন্য যে সহমর্মিতা, মমত্ববোধ এবং একই সাথে সত্য ও ন্যায়ের প্রতি অবিচল আস্থার কথা মর্মস্পর্শীভাবে ব্যক্ত হয়েছে।
গু ঝধষধসঃড় ুড়ঁ· ঠবৎু মষধফঃড় যবধৎঃযধঃ গড়ঁষধহধ ঝযধযবন রং ড়ঁঃ ভৎড়সঃযব লধরষ· ··· ও ধিংঃৎধহংভবৎৎবফ ভৎড়স উধপপধ ঔধরষঃড় এড়ঢ়ধষমধহলঃড় ঢ়ৎড়ফঁপব নবভড়ৎবঃযব এড়ঢ়ধষমধহল ঈড়ঁৎঃ· অমধরহ ও ধিং ৎবঃৎধহংভবৎৎবফঃড় ঋধৎরফঢ়ঁৎ ঔধরষ নবপধঁংব, রহঃযব ংঁন-লধরষ,ঃযবৎব রং হড় ধপপড়সসড়ফধঃরড়হ ভড়ৎঃযব ঝবপঁৎরঃু চৎরংড়হবৎ· ও ধসঃড় ধঃঃবহফ রহ ধষষ ফধঃবং ড়ভঃযব পধংব ভৎড়স ঋধৎরফঢ়ঁৎ লধরষ· অ ংরহমষব লড়ঁৎহবু ভৎড়স ঋধৎরফঢ়ঁৎঃড় এড়ঢ়ধষমধহল ৎবয়ঁরৎবং ৬০ যড়ঁৎং,ঃযব ৎড়ঁঃব ধহফঃযব পড়হাবুধহপব মবহবৎধষষু ঁংবফ ধৎব ঢ়ৎড়াবৎনরধষষুঃরৎবংড়সব· ও ফড় হড়ঃ শহড় িযড় িষড়হমঃযরং পধংব রিষষ পড়হঃরহঁব· অহু যড় িও ফড় হড়ঃ পধৎব ভড়ৎঃযধঃ· ··· চষবধংব ফড় হড়ঃঃযরহশ ভড়ৎ সব· ও শহড়,িঃযড়ংব যিড় ঢ়ৎবঢ়ধৎবফঃড় ফরব ভড়ৎ ধহু পধঁংব ধৎব ংবষফড়স ফবভবধঃবফ· এৎবধঃঃযরহমং ধৎব ধপযরবাবফঃযৎড়ঁময মৎবধঃ ংধপৎরভরপবং· অষষধয রং সড়ৎব ঢ়ড়বিৎভঁষঃযধহ ধহুনড়ফু বষংব, ধহফ ও ধিহঃ লঁংঃরপব ভৎড়স ঐরস· ··· খধংঃ ঙপঃড়নবৎ যিবহ বি সবঃ রহঃযব উধপপধ পবহঃৎধষ লধরষ মধঃব, ুড়ঁ শরহফষু ঢ়ৎড়সরংবফঃড় ংবহফ ংড়সব নড়ড়শং ভড়ৎ সব· ও যধাব হড়ঃ ুবঃ ৎবপবরাবফ ধহু নড়ড়শ· ণড়ঁ ংযড়ঁষফ হড়ঃ ভড়ৎমবঃঃযধঃ ও ধস ধষড়হব ধহফ নড়ড়শং ধৎব ড়হষু পড়সঢ়ধহরড়হ ড়ভ সরহব্থ·
সত্য কথা স্পষ্ট করে বলতে পারাই একটি মহৎ কাজ। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত জীবনের অসমাপ্ত আত্মজীবনী বাঙালির ও বাংলার সংগ্রামমুখর ইতিহাসের একটি অসাধারণ প্রামাণ্য দলিল, বাঙালির জীবনে যা অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকবে। স্বামী বিবেকানন্দ একটা কথা বলতেন ও বিশ্বাস করতেন- ‘ফাঁকি দিয়ে চালাকি করে বৃহৎ ও মহৎ কাজ করা যায় না।’ বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়লে এবং তার মাত্র ৫৫ বছরের জীবন পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাবো, শেখ মুজিব তার জীবনের প্রতিটি কালপর্বে সততা, নিষ্ঠা, ত্যাগ, শ্রম ও মেধার স্বাক্ষর রেখেই অগ্রসর হয়েছেন। তাই তিনি বাঙালি চিত্তরঞ্জন দাশ, সুভাষ চন্দ্র বসু, শেরে বাংলা, সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানীর মতো অগ্রজ নেতাদের ছাড়িয়ে শ্রেষ্ঠ বাঙালির মর্যাদায় ভূষিত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত জীবনের এই অসমাপ্ত কিন্তু অসামান্য আত্মজীবনী এমন অসংকোচ সত্যেরই এক অনন্য নিদর্শন এবং জাতির জন্য একটি অনিঃশেষ আলোকবর্তিক বিশেষ।
০২ জুলাই ২০১২
বি·দ্রঃ লেখাটি ০৭·০৭·২০১২ তারিখে দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে।

No comments:

Post a Comment